[caption id="attachment_1996" align="alignnone" width="600"]
কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য খামারে প্রস্তুত রয়েছে হোলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড় দুটি। [/caption]
হোলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের বড় দুটি ষাঁড়। খামারি একটির নাম রেখেছেন—‘লাল বাদশাহ’, অপরটির ‘সাদা বাদশাহ’। একটির ওজন ১৫ মণের মতো, অন্যটি প্রায় ১৬ মণ। ষাঁড় দুটি প্রস্তুত করা হয়েছে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য। দুটি ষাঁড়ের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৭ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা দাম উঠেছে বলে জানিয়েছেন খামারি। কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সদর ইউনিয়নের লম্বরী গ্রামের নুর অ্যাগ্রো খামারে রয়েছে ষাঁড় দুটি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, খামারের আঙিনায় থাকা বড় একটি গাছে ষাঁড় দুটি বেঁধে রাখা হয়েছে। ষাঁড়গুলো দেখতে স্থানীয় অনেক মানুষ ভিড় করেছেন। তবে মানুষ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে ষাঁড় দুটি।
সরেজমিনে কথা হয় খামারি আবদুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কালো বাদশাহর ওজন ১৫ মণের মতো। দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ৫ ইঞ্চি, উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। অন্যদিকে সাদা বাদশাহর ওজন ১৬ মণ। দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ৭ ইঞ্চি, উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। আগামী ১ জুন টেকনাফ সদরের লম্বরীর পর্যটন মাঠের কোরবানির পশুর হাটে ষাঁড় দুটি বিক্রির জন্য তোলা হবে।
আবদুল করিম বলেন, ‘অনেক ক্রেতা ষাঁড় দুটি দেখতে খামারে আসছেন। ১৭ লাখ টাকা দাম চেয়েছিলাম। এর মধ্যে ১২ লাখ টাকায় কেনার ক্রেতা রয়েছে। দুটি ষাঁড়ের পেছনে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে এই মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব নয়।’
খামারের পাঁচ শ্রমিক মনির আহমদ, মো. হোসেন, মো. ফারুক, মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. রুবেল ষাঁড় দুটির পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন। লাল বাদশাহকে ঘাস খাওয়াতে খাওয়াতে মনির আহমদ (৩৪) বলেন, ‘অচেনা লোক দেখলে ষাঁড়টি হুংকার ছাড়ে, শিং নেড়ে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে সাদা বাদশাহ শান্ত প্রকৃতির। পিঠে উঠলেও নড়াচড়া করে না।’ তিনি বলেন, ‘ষাঁড় দুটিকে খামারে আলাদা শেডে রাখা হয়। মশা-মাছির উৎপাত ও অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষার জন্য ফ্যানের নিচে রাখতে হয়। লোডশেডিং হলে জেনারেটরের সাহায্যে ফ্যান চলে।’
খামারের কর্মচারীরা বলেন, প্রতিদিন ১০ কেজি গমের ভুসি, ভুট্টা, খেসারি ও মটর ডাল; ৫ কেজি ছোলা বুটের গুঁড়ার মিশ্রণ, ২০ কেজি ঘাস, ৫ কেজি খড় খাওয়ানো হয় ষাঁড় দুটিকে। খাবারের পেছনে দৈনিক খরচ হয় ১ হাজার টাকার বেশি। তা ছাড়া সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে প্রতিদিন দুই বেলা করে গোসল করাতে হয় ষাঁড় দুটিকে।
শখ করে ষাঁড়ের নাম লাল বাদশাহ ও সাদা বাদশাহ রেখেছেন জানিয়ে খামারের মালিক আবদুল করিম বলেন, দুই বছর আগে ষাঁড় দুটি বাজার থেকে কেনা হয়। তখন ওজন ছিল তিন মণের কাছাকাছি। মোটাতাজাকরণের কোনো ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশি ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ষাঁড় দুটিকে মোটাতাজা করেছেন তিনি।
খামারে কথা হয় উপজেলার সাবরাং এলাকার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের সঙ্গে। একটি ষাঁড় কেনার উদ্দেশে তিনি খামারে এসেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছয় লাখ টাকায় তিনি লাল বাদশাহকে কিনতে চেয়েছেন। তবে খামারি সাড়ে ৮ লাখের কমে বিক্রি করতে রাজি নন। এত টাকা দিয়ে ষাঁড়টি কিনলে প্রতি কেজি মাংসের দাম ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি পড়বে।
খামারের এই দুটি ষাঁড় ছাড়াও কয়েকটি শেডে আরও ১১০টি গরু ও মহিষ রাখা। খামারি জানান, এর মধ্যে ৪২টি গরু-মহিষ এবারের কোরবানির হাটে বিক্রি হবে। খামার মালিক আবদুল করিম বলেন, সাত বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খামারটি পরিচালনা করে আসছেন তিনি। খামারের কয়েকটি গাভি থেকে নিয়মিত দুধ সংগ্রহ করা হয়। প্রতিবছর খামারের পশু বিক্রি করে অন্তত ২০-৩০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। গত বছর কোরবানির হাটে তিনি ৭৪টি গরু-মহিষ বিক্রি করেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, টেকনাফে এবারের কোরবানির পশুর চাহিদা আছে ৭ হাজার ৬৯৬টি। খামারে বিক্রির উপযোগী পশু প্রস্তুত আছে ৬ হাজার ৭৪১টি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারাধন চন্দ্র সুশীল বলেন, আবদুল করিমের মতো বহু খামারি পশু লালন-পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কোরবানির হাটে মিয়ানমারের চোরাই গরু কিংবা রোগাক্রান্ত পশু যেন বিক্রির জন্য তোলা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।