এ প্রসঙ্গে রুমানা বলেন, '২০২২ সালে সর্বশেষ জাতীয় দলের জার্সিতে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলাম। দল থেকে বাদ পড়ার কোনো ক্যাম্পেও আমি ডাক পাইনি। ১৬ মাস পর গত বছরের জুলাইতে এশিয়া কাপের আগে একবার ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলাম। এরপর আর কোনো ক্যাম্প কিংবা ম্যাচে কখনোই ডাক পাইনি। আমি তো একজন পেশাদার খেলোয়াড়। কিন্তু আমি সেরকম কোনো সু্যোগ-সুবিধা পাচ্ছি না।'
'এটা ক্রিকেট। পারফরম্যান্স থাকলে খেলব, না থাকলে খেলব না। তবে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে নজরেই থাকব না, এমন তো হওয়ার কথা নয়। ভালো খেললে দলে আসব, খারাপ খেললে বাদ যাব, এটাই তো নিয়ম। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছে না। আমার ক্ষেত্রে হয়নি। এত দীর্ঘ সময় ধরে দলের বাইরে আছি, এমন নয় যে আমি আর খেলতে পারছি না বা একেবারেই ফর্ম নেই। এমনও না। তাহলে এটা কেন হচ্ছে? এরকম ব্যবহার তো আমি পাওয়ার কথা না৷'
রুমানা দাবি করেন, তার মতো একই সমস্যার ভুক্তভোগী জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং সবচেয়ে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সালমা খাতুনও। তিনি বলেন, 'এটা শুধু আমার সঙ্গেই হচ্ছে না। সালমা আপুর সঙ্গেও হচ্ছে। সালমা আপুর মতো খেলোয়াড় আর কয়টা আছে? এমন নয় যে আমাদের চেয়ে খুব ভালো কেউ খেলছে। তাহলে তো বাংলাদেশ দলের অবস্থা আরও ভালো হওয়ার কথা ছিল। এমন চললে দিনশেষে দেখা যাবে আর কোনো খেলোয়াড়ই নেই।
'এটা অনেক হতাশাজনক। আমার তো অন্তত জানার অধিকার আছে, কেন আমি কোথাও নেই। আর সে কারণেই মূলত এই স্ট্যাটাস দেয়া। এর আগেও অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, হতাশা থেকে এরকম স্ট্যাটাস দিয়েছি। তবে এটাই আমার শেষ চেষ্টা। আমি তো এরকম আশা নিয়ে বসে থাকতে পারব না। হয় খেলব আর না হলে একদমই ছেড়ে দিতে হবে।'
বোর্ডের কাছে সদুত্তর চেয়ে তিনি বলেন, 'তারা নতুনদের নিয়ে দল গড়তে চায়। যারা এখন দলে আছেন, তারা কি সবাই ভালো করছে? ভালো-খারাপ মিলিয়েই তো দল হচ্ছে। সিনিয়র-জুনিয়র কম্বিনেশনেই দল হওয়া উচিত। আমার কী ঘরোয়ার পারফরম্যান্স খারাপ? গত মৌসুমেও আমার একটা সেঞ্চুরি আছে, বোলিংয়েও আমার রেকর্ড ভালো। তবুও কেন আমাদের সাথে এমন করা হচ্ছে, সেটা জানা জরুরি। তাদের কী ইচ্ছা আমি জানি না, আমাকে একটু ক্লিয়ার করলে আমি খুশি হতাম। আমার আর এগুলো ভালো লাগছে না।'
'এটা অনেক হতাশাজনক। আমার তো অন্তত জানার অধিকার আছে, কেন আমি কোথাও নেই। আর সে কারণেই মূলত এই স্ট্যাটাস দেয়া। এর আগেও অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, হতাশা থেকে এরকম স্ট্যাটাস দিয়েছি। তবে এটাই আমার শেষ চেষ্টা। আমি তো এরকম আশা নিয়ে বসে থাকতে পারব না। হয় খেলব আর না হলে একদমই ছেড়ে দিতে হবে।'
এরপরেও বোর্ডের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেলে কী করবেন, সে প্রশ্নের উত্তরে রুমানা বলেন, 'ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই ক্রিকেটকে বিদায় জানাব। বোর্ডের চুক্তি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেব।'
তিনি আরও বলেন, 'স্ট্যাটাসের পর এখন পর্যন্ত বোর্ডের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। হয়তো ছেলেদের খেলা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। গত ৩ বছরেও কারো থেকে কোনো রেসপন্স পাইনি। সতীর্থরা দুয়েকজন জিজ্ঞেস করেছে কী সমস্যা হচ্ছে।'
'একটা খেলোয়াড় কেন জাতীয় দলে নেই, সেটার অনেক কারণ থাকতে পারে। ফর্ম, বয়সের মতো অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় আসে। কারো যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেটা সে অবশ্যই আগে কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবে। সে ফেসবুকে পোস্ট দিবে না। বোর্ডের কারো কাছে লিখিত দিলে আমি এই বিষয়ে জবাব দিতাম। যেহেতু সে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে, সেহেতু এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না'- নারী ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ শিপন
টিম ম্যানেজমেন্টের উদাসীনতা নিয়ে এর আগেও বোর্ডের বিভিন্ন কর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন রুমানা। সেখানেও পাননি কোনো সদুত্তর, 'আমার সঙ্গে ফাহিম স্যারের (ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান), নির্বাচক শিপন ভাইয়ের কথা হয়েছে। আগে যখন বাশার ভাই (সাবেক প্রধান নির্বাচক) ছিল তার সঙ্গেও কথা হয়েছে। উনারা বলেছেন দেখতেছি ব্যাপারটা। এরপর আর কিছুই হয়নি।'
রুমানার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারী ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ শিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সময় সংবাদকে বলেন, 'একটা খেলোয়াড় কেন জাতীয় দলে নেই, সেটার অনেক কারণ থাকতে পারে। ফর্ম, বয়সের মতো অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় আসে। কারো যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেটা সে অবশ্যই আগে কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবে। সে ফেসবুকে পোস্ট দিবে না। বোর্ডের কারো কাছে লিখিত দিলে আমি এই বিষয়ে জবাব দিতাম। যেহেতু সে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে, সেহেতু এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।'
রুমানার ক্রিকেট ছাড়ার বিষয়ে নির্বাচক বলেন, '২০১৯ পর্যন্ত রুমানা জাতীয় দলের অন্যতম সুপারস্টার ছিলেন। এরপর সে দলে না থাকার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। সে যদি ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চায় বোর্ডের কর্তারা আছে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে কী করা যায় বা ওর বিদায়টাকে কিভাবে উদযাপন করা যায়। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তো সমাধান পাওয়া যাবে না।'
গত মঙ্গলবার নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে রুমানা লেখেন, 'বিসিবির সম্মানিত অভিভাবকদের বলছি। আমি খেলি কিংবা না খেলি, এমন অনৈতিকতা ও বিশৃঙ্খলা আর চলতে পারে না। দয়া করে আমাকে চূড়ান্ত সমাধান দিন। কোনো কারণ ছাড়া দীর্ঘ তিন বছর বাইরে থাকা কোনো রকমের হাস্যকর বিষয় নয়।'
তিনি আরও লেখেন, 'আমার রেকর্ডই প্রমাণ করে যে আমি কখনোই অবহেলা করে কিংবা নোংরা ক্রিকেট খেলিনি এবং কখনোই কোনো অনৈতিক কাজে জড়াইনি। সিনিয়রিটি কখনোই অভিশাপ হতে পারে না। আমি স্পষ্টভাবে ন্যায়বিচার চাই, তাদের বিরুদ্ধে যারা আমার উজ্জ্বল ক্রিকেট ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে।'
মূলত বোর্ডকে ইঙ্গিত করে রুমানার দেয়া এই স্ট্যাটাসের পর থেকেই তার বিষয়টি আলোচনায় আসতে শুরু করে। এবার বোর্ডের পক্ষ থেকে কী উত্তর আসে, সেটিই দেখার অপেক্ষা।