
আমরা অনেকেই ভাবি, যাঁরা হাই পারফরমার, তাঁদের এমন দক্ষতা বুঝি প্রাকৃতিক বা এটা তাঁদের প্রতিভা। আদতে প্রতিভা নয়, কাজে পারদর্শী হওয়ার রহস্য লুকানো থাকে দৈনন্দিন অভ্যাসে। এমনই ১০টি অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নিন, যা ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজে দক্ষ হতে আপনাকে সহায়তা করবে।

১. সকালের নিয়ম
কাজ না পেছানোর সবচেয়ে সহজ কৌশল এটি। যে কাজ দুই মিনিটের মধ্যে করা যায়, সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলতে হবে। যেমন ঘুম থেকে উঠে বিছানা গুছিয়ে ফেলা। এক গ্লাস পানি খাওয়া, এতে মস্তিষ্ক জেগে উঠবে। পর্দা সরিয়ে আলো আসতে দেওয়া, এটা দিন শুরু করতে সহায়তা করবে।
২. ফোকাস ৯০
৯০ মিনিটের ফোকাস ব্লক বা ৯০ মিনিটের একটানা কর্ম পর্ব ৮ ঘণ্টার চেয়েও কার্যকর। খেলোয়াড়েরা যখন অনুশীলন করেন, ৯০ মিনিট ব্যায়ামের পরে ৩০ মিনিট বিশ্রাম নেন। এ সময় সামনে থাকে না কোনো প্রকার স্ক্রিন। এটি আদতে কাজ ও বিশ্রামের এক চক্র, যা ৯০ থেকে ১২০ মিনিট ধরে চলে। এই ছন্দ অনুযায়ী কাজ করলে বেশি মনোযোগ থাকে এবং ক্লান্তি কম লাগে।
৩. কাজের তালিকা করুন
এজেন্ডাবিহীন মিটিং বা মন থেকে করতে ইচ্ছা করছে না, এমন কাজগুলোকে ‘না’ বলুন। প্রয়োজনে তিনটি বিষয়ের তালিকা করুন, যেটা এই সপ্তাহে আর করবেন না।
৪. ২ মিনিটের কাজ
ছোট কাজ যেন মানসিকভাবে চাপ না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কোনো কাজ করতে যদি দুই মিনিটের কম সময় লাগে, সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলুন। যেমন ছোট ই–মেইলের উত্তর দেওয়া, কোট ঝুলিয়ে রাখা বা কফির কাপ ধোয়া। এর ফলে ‘পরে করব’ বা কাজ ঝুলিয়ে রাখার চাপ ৮০ শতাংশ কমে যাবে।
৫. ‘না’ মানে ‘না’
যদি মনে হয় ‘না’, তবে ‘না’-তেই থাকুন। এভাবে সপ্তাহে বাঁচাতে পারবেন প্রায় ১১ ঘণ্টা। যেমন কোনো আমন্ত্রণ এলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে না হলে যাবেন না।

৬. সাপ্তাহিক রিভিউ
সপ্তাহের শেষ দিন পুরো সপ্তাহের কাজের একটা রিভিউ করে ফেলুন। ১৫ মিনিটের বেশি লাগবে না কাজটি করতে। পুরো সপ্তাহের তিনটি সফলতা লিখে ফেলুন। এ থেকে নিজের অগ্রগতি নিজেই যাচাই করতে পারবেন। যেসব সমস্যা সমাধান করতে পারেননি, পরের সপ্তাহেই সমাধান করুন। সপ্তাহের শুরুর দিন তিনটি কাজকে অগ্রাধিকার দিন, যা সপ্তাহের বাকি দিনগুলো ভালোভাবে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
৭. ক্লান্তি দূর করা
বিকেল হতে না হতেই অনেকে ক্লান্ত হয়ে যান। খেলোয়াড়েরা বিকেলে তিনটি জিনিস খেয়াল করেন। শেষ এক ঘণ্টায় কতবার নড়াচড়া করেছেন? যথেষ্ট পানি খেয়েছেন কি না পুরো দিনে? আর প্রোটিন বা বিশ্রামের দরকার আছে কি না? এই তিন বিষয়ের কোনোটি কম করা হলে করে ফেলুন। বিকেলের ক্লান্তি উধাও হয়ে যাবে অনেকটাই।
৮. তথ্য গ্রহণ
প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো কৌশলগতভাবে গ্রহণ করুন। সামাজিক মাধ্যমে চোখ বোলান, বই পড়ুন, ভিডিও দেখুন—যেটি আপনার কাজে লাগবে বা নিখাদ আনন্দ দেবে। অর্থাৎ অকারণে ফোন স্ক্রল করা যাবে না।

৯. ১০-১০-১০ নিয়ম
দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এটি সহজ সূত্র। প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবুন—কাজটা করলে ১০ মিনিট পর কেমন লাগবে? ১০ মাস পর কেমন লাগবে? ১০ বছর পরে কেমন লাগবে? এর ফলে এমন অনেক ইতিবাচক কাজ হয়তো শুরু করবেন, যা আগে কখনোই করেননি।
১০. শেষ করুন
দিন শেষ হওয়ার আগে আগামী দিনের তিনটি কাজ লিখে ফেলুন। সব ট্যাব এবং অ্যাপ বন্ধ করে ফেলুন। শারীরিকভাবে সবকিছু দূরে সরে এলে মানসিকভাবেও দূরে সরে আসা হয়। ‘ডান’ অর্থাৎ ‘শেষ’ শব্দটি জোরে উচ্চারণ করুন। এর ফলে দিন সমাপ্ত হবে নিজের মতো করে, দ্রুত ঘুমানো যাবে, সকালে সতেজ হয়ে উঠতে পারবেন।