[caption id="attachment_6171" align="aligncenter" width="600"]
খুলনার কয়রায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের পাশে বাঁধা যুবলীগ কর্মীর ড্রেজার। সম্প্রতি কপোতাক্ষ নদের পাশে ঘাটাখালি এলাকায়- ছবি: সত্যের পথে[/caption]
বালু লুটের ঘটনায় আদালতের সমন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা– কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না যুবলীগ কর্মী হারুন গাজীকে। তাঁর নেতৃত্বে খুলনার কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ নদ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু লুট চলছেই। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর তিনি যুবলীগ ছেড়ে দেন। ওঠাবসা করছেন যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। তাঁর বালু লুটের কারণে নদীসংলগ্ন এলাকায় বাড়ছে ভাঙনের ঝুঁকি।
নদী দুটি থেকে বালু লুটের বিষয়ে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর সত্যের পথে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা হারুন গাজীসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। আদালত ৬ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এ কারণে কিছুদিন গা ঢাকা দেন। আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবারও বালু লুটে সক্রিয় হয়ে পড়েন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এরই মধ্যে গত ২৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে কপোতাক্ষ নদ থেকে তিন সহযোগীসহ হারুনকে আটক করেন কয়রার ইউএনও। এ সময় একটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়। পরদিন এক লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। এলাকাবাসী জানায়, ছাড়া পেয়ে আরও কয়েকটি ড্রেজার ভাড়া করেন হারুন। আবারও একই জায়গায় বালু তুলছেন তিনি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রেজারের এক শ্রমিক বলেন, কয়রা উপজেলার বাঁধ নির্মাণ কাজের বেশির ভাগ বালু যুবলীগ কর্মী হারুন সরবরাহ করেন। রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তিনি অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন অভিযানে নামলেও খুব বেশি সমস্যা হয় না জানিয়ে এই শ্রমিক বলেন, ‘যে টাকা জরিমানা দিতি হয়, এক রাত বালু কাটলি তার দু-তিনগুণ উঠে আসে।’
এর আগেও একাধিকবার আটক হয়ে হারুনকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। তবে তাঁকে কিছুতেই থামানো যায়নি। এলাকার লোকজনের ভাষ্য, আটকের পর জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন হারুন। যুবলীগ কর্মী হওয়ায় আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় নেতাদের প্রশ্রয়ে থেকে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছিলেন। এখনও একই কায়দায় চলছেন তিনি।
উপজেলা সদরের পাশে মদিনাবাদ গ্রামে প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি তৈরি করেছেন হারুন। তাঁর প্রতিবেশী আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন তিনি। আগে স্থানীয় যুবলীগের সভাপতির প্রশ্রয়ে থেকে এই ব্যবসা করেছেন। তখন কয়রা বাসস্ট্যান্ডের পাশে রুম ভাড়া নিয়ে যুবলীগের অফিস বানিয়েছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর যুবলীগের সাইনবোর্ড খুলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টানিয়েছেন হারুন। আগে যেখানে যুবলীগ নেতাকর্মীদের আনাগোনা ছিল, এখন যুবদলের স্থানীয় এক নেতা সেখানে আসা-যাওয়া করেন।
এলাকাবাসী জানায়, এক সময়ের ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন হারুন গাজী। অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তিনতলা ভবন নির্মাণে তাঁর প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিনেছেন গাড়িও। বালুর কারবার করায় তিনি বালু হারুন নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
কপোতাক্ষ তীরের হরিণখোলা গ্রামের রুহুল আমিন গাজী, ইস্রাফিল গাজীসহ কয়েকজনের অভিযোগ, হারুন গাজী ও তাঁর লোকজন প্রতি রাতেই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে বালু তুলে ঠিকাদারকে সরবরাহ করছেন। সেই বালু বস্তায় ভরে ঠিকাদারের লোকজন ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে হারুন গাজীর ভাষ্য, ‘আগে যুবলীগ করতাম, এখন করি না। এলাকার উন্নয়নকাজের জন্য বালু সরবরাহ করি।’ এতে ক্ষতির কিছু নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি বড় দলের স্থানীয় নেতারা সুন্দরবনের পাশের নদী থেকে হারুন গাজীকে বালু তুলতে অনুমতি দিতে সুপারিশ করেছিলেন। তারা অনুমতি না দিলেও প্রতি রাতে বালু তোলা হচ্ছে। এতে বনের নদীসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ পেয়ে অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে কয়রা ইউএনও মো. আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, অভিযানে একটি খননযন্ত্রসহ ৪ জনকে আটক করা হয়েছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের জরিমানা করা হয়। অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।