[caption id="attachment_7246" align="aligncenter" width="600"]
দখলের কারণে কালীর ছড়া খাল নালায় পরিণত হয়েছে-সত্যের পথে[/caption]
নাম কালীর খাল। দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটার। অবস্থান চট্টগ্রাম নগরে। এই খাল পুনরুদ্ধারে ২৬০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পেয়েছে তিন কোটি টাকা। চাহিদার ২ শতাংশের কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৮ সালের বিএস রেকর্ডে খালটির প্রস্থ ২৫ ফুট। বর্তমানে এটি কোথাও চার ফুট, কোথাও আট ফুট প্রস্থে এসে ঠেকেছে। খালের বুকে গজিয়ে উঠেছে ৩১টি বহুতল ভবনসহ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর খালে প্রাণ-প্রকৃতি ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয় পাউবো।
পাউবো চট্টগ্রাম-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, খালটি পুনরুদ্ধারে ২৬০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় ও বোর্ড যাচাই-বাছাই শেষে পরিষ্কারকরণ ও পুনর্খননের জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সে অনুযায়ী দরপত্র ডাকা হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে।
চট্টগ্রাম শহরের খাল ও পাহাড় রক্ষায় আন্দোলন করছেন পরিবেশকর্মী শফিকুর রহমান শফিক। তিনি বলেন, খালটি উদ্ধার ও রক্ষায় পাউবো সমীক্ষা চালিয়ে একটি প্রকল্প নিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্প সরকার পাস না করে আবর্জনা পরিষ্কার ও পুনর্খননের জন্য নামমাত্র বরাদ্দ দিয়েছে। এটা দুঃখজনক। কারণ, এ অঞ্চলের পাহাড়, খাল, ছড়া রক্ষা করতে গিয়ে বর্তমান পরিবেশ উপদেষ্টা পর্যন্ত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। তাই পরিবেশ, প্রকৃতি ও খাল রক্ষায় পাউবোর প্রকল্পটি সরকারের বিবেচনায় নেওয়া উচিত। না হলে চট্টগ্রামের মানচিত্র থেকে একদিন এ খালটি হারিয়ে যাবে।
কালীর ছড়া খালের উৎপত্তিস্থল লেক সিটি ডাইভারশন পাহাড়ি এলাকায়। এখান থেকে বিশ্ব কলোনি, ইউনিলিভার ও দক্ষিণ সলিমপুরের মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পাশ দিয়ে লতিফপুরে ১ ভেন্ট রেগুলেটরে গিয়ে শেষ হয়েছে। এখান থেকে আরও এক কিলোমিটার খাল মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে। খালটি খনন না করায় পাহাড়ি মাটি ও বালুতে ভরাট হতে হতে নালায় পরিণত হয়েছে। পাউবোর প্রস্তাবিত প্রকল্পে ২৫ ফুট প্রস্থ ও তিন ফুট গভীর করে খনন করার সুপারিশ করা হয়। অবৈধ দখল ঠেকাতে খালের উভয় পাশে ১৬ মিটার করে রিটেইনিং ওয়াল করার কথা ছিল। খাল খননে ১২ কোটি টাকা, রিটেইনিং ওয়াল তৈরিতে ২১০ কোটি টাকা, ০.২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ২৫ কোটি টাকা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এক কোটি টাকা এবং প্রকল্প ভবন তৈরিতে ১২ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়। খাল পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পে পরিষ্কারকরণ ও পুনর্খননে টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
পাউবোর ডিজিটাল জরিপে উঠে আসে, খালটির বিশ্ব কলোনির লেক সিটি হাউজিং প্রকল্প অংশে তিনটি প্লটের আংশিক, হাউজিংয়ের রাস্তা, খালের ওপর আবদুর রহিমের তিনতলা ভবনসহ ৩১টি বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচতলা ভবন একটি, চারতলা ভবন তিনটি, তিনতলা ভবন চারটি, দোতলা ভবন পাঁচটি, একতলা ভবন ছয়টি, সেমি পাকা বাড়ি ছয়টি, টিনশেড ছয়টি বাড়ি এবং ৭০টি স্থাপনা রয়েছে। বিএস রেকর্ড অনুযায়ী, খালের লেক সিটি এলাকায় প্রস্থ ১৮.৫ ফুটের স্থলে চার ফুট, বিশ্ব কলোনি এলাকায় ১৬ ফুটের স্থলে পাঁচ ফুট, সিটি গেট এলাকায় ২৬ ফুটের স্থলে সাত ফুট, লতিফপুরে ২৯ ফুটের স্থলে আট ফুট রয়েছে।
পাউবো উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ খাল খনন হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণেও সরকারিভাবে কোনো কাজ করা হয়নি। তাই অবৈধ দখল, মাটি-বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। আমাদের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে জঙ্গল পরিষ্কার, সমতলকরণ, ড্রেসিং যতটুকু পারা যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হবে।