ইউক্রেন ইস্যুতে সুর বদলালেন ট্রাম্প, পাল্টা বার্তা রাশিয়ার

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ চলছেফাইল ছবি: এএফপি

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে হঠাৎ করেই সুর বদলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলো আবার কিয়েভ ফিরে পেতে পারে বলে বিশ্বাস তাঁর। কিছুদিন আগেও যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছাড় দেওয়া লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর ক্রেমলিন বলেছে, ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে যাবে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানেই কথাগুলো বলেন তিনি। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়াও। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর উপদ্বীপটি দখল করে নিয়েছিল রুশ বাহিনী।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়া এখন বড় অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেনের পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। তিনি মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে বর্তমানে লড়াই করার এবং নিজেদের প্রকৃত মানচিত্রের পুরো অংশ ফিরিয়ে আনার অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের শুরু থেকেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এককাট্টা সমর্থন পেয়ে আসছিল ইউক্রেন। গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর সেই সমর্থন অনেকটাই কমে। পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এ লক্ষ্যে একাধিকবার ইউক্রেনের ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।

এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সে সময় দুজনের মধ্যে বেশ সখ্য দেখা গিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনসহ ইউরোপীয় নেতাদের শঙ্কা ছিল, আড়ালে হয়তো ইউক্রেনের দখল হওয়া ভূখণ্ডগুলো রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনকে অঞ্চল ছাড় দেওয়ার কথা বলেছিলেন ট্রাম্পও।

এখন ট্রাম্পের অবস্থান বদলের পর সমালোচনা করে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার বলেছেন, ইউক্রেন নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, তা অর্জন করতে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিশেষ সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে রাশিয়া। রাশিয়ার বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এটি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন ট্রাম্প। এমন মন্তব্যের বিরোধিতা করেন পেসকভ। যদিও নিজেদের অর্থনৈতিক সমস্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। পেসকভ বলেন, রাশিয়া নিজেদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখছে। তবে এটি সত্যি যে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে নানা সমস্যা ও উদ্বেগ রয়েছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যে রাশিয়া নাখোশ হলেও এতে বেশ খুশি হয়েছেন জেলেনস্কি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আলোচনা ‘ভালো ও গঠনমূলক’ হয়েছে। ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘বড় পরিবর্তন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র–ইউক্রেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি রয়েছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রশংসা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস। বুধবার তিনি বলেন, ‘এটি খুবই জোরালো বক্তব্য। এমনটা আমরা আগে এ ধরনের পরিসরে শুনিনি। তাই এখন আমরা একই ধরনের বোঝাপড়ায় পৌঁছেছি। বিষয়টি সত্যিই ভালো।’

Leave a Reply

Scroll to Top