আমরা সরকার নই অথচ ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে ডাকসুতে আমাদের ভরাডুবি হয়েছে-এটা বলা যাবে না * অন্তর্বর্তী সরকারকেই নির্বাচন আয়োজনে সফলতা দেখাতে হবে


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন সরকারের কোনো অংশ না হয়েও অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতার দায়ভার তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এনসিপির বিরুদ্ধে নির্বাচন আয়োজনে বাধা দেওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়, সেটাও সঠিক নয়। সোমবার যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন, দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচনি জোটসহ বেশকিছু সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তার দল সব সময় নির্বাচনের পক্ষে। প্রয়োজনে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু নির্বাচন তারাই পিছাতে চায় যারা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটাকে এড়িয়ে যে কোনোভাবে একটা নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এটাই সন্দেহের সৃষ্টি করে।

দাবি অনুযায়ী নতুন সংবিধান না হলে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে এনসিপি কোনো ধরনের বাধা দেবে কি না-এমন প্রশ্নে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কোন রাজনৈতিক দল তো নির্বাচন ঠেকিয়ে দিতে পারে না। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হচ্ছে কিনা-সেই জায়গাটি আপনারা দেখতে পারেন। সরকার আসলে নির্বাচন আয়োজনে সফল হতে পারছে কি না-আমরা সেদিকেই মনোযোগী হচ্ছি।

নতুন রাজনৈতিক দল হিসাবে এনসিপির অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজনীতির মাঠে একটা প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে-কথা তিন ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে-সত্য কথা, মিথ্যা কথা এবং রাজনৈতিক কথা। আমাদের চিন্তা, আমাদের কথা এবং কর্মের মাধ্যমে আমরা এই লাইনটা ব্রেক করতে পারছি। কথা ও কাজের মধ্যে আমরা একটা সিমিলারিটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারছি। একটা এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের রাজনীতি দাঁড় করানো ডিফিকাল্ট ছিল। তবে আমরা চেষ্টা করেছি।

সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে এনসিপি সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা জিতেছে তারা সাংগঠনিকভাবে সুসংহত ছিল। এক্ষেত্রে লার্নিংটা হচ্ছে সাংগঠনিক সাপোর্ট বা ভিত্তিটা সুসংহত করা। সে জন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সংগঠনকে আরও সংহত করার প্রতি আমরা বেশি মনোযোগী হচ্ছি। ডাকসু নির্বাচন ওয়ার্মআপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন আরও বৈচিত্র্যময়। ফলে ডাকসু আমাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার একটা বার্তা।

এনসিপি’র সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দু’একটা ঘটনাকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। এসব নিয়ে একটা মিডিয়া ফ্রেমিং চলছে। অথচ অনেক রাজনৈতিক দলের মিডিয়া দখল, ব্যাংক দখল, হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি’র কথা শোনা যায়। সেগুলো মিডিয়ায় সেভাবে আসে না।

তবে এগুলো কোনোভাবেই কাম্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, গুলশানের যে ঘটনা নিয়ে এত হৈচৈ সেই অভিযোগ কিন্তু আমরাই থানায় দিয়েছি। দেখতে হবে কোনো ঘটনায় আমরা অপরাধীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছি কি না।

কুমিল্লা চার আসনে নিজের প্রার্থিতা এবং নির্বাচনি প্রচারণা প্রসঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এখনো দলীয়ভাবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমি যেহেতু দক্ষিণাঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছি তাই সাংগঠনিকভাবে উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি করা হয়।

আগস্টে সরকার পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে হামলা, ভাঙচুরসহ নানা ধরনের ‘মব’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মব একেবারেই হয়নি ব্যাপারটা এমনও নয়। অবশ্যই হয়েছে। তবে সংঘবদ্ধ ফ্যসিবাদবিরোধী জনগোষ্ঠীকে যদি মব বলেন সেটা যথাযথ হবে না। বৃহত্তর স্বার্থে বৃহত্তর সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধকে মব বলা যথাযথ হবে কি-না সেটা আপানাদের বিবেচনা।

জুলাই-আগস্টের ঘটনায় ব্যাপকহারে মামলা ও আসামি বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর এগুলো কারা করেছে। এসব থেকে কারা সুফল পেয়েছে এগুলো আপনাদেরকে খুঁজে দেখতে হবে। একটা ৩০০-৪০০ জনের লিস্ট যারা পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে তাদেরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করুণ। কেন তারা এসব করেছে তারাই সেটা ভালো বলতে পারবে।

বর্তমান পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগতভাবে কোনো ধরনের হুমকি বা ঝুঁকি অনুভব করেন কি না এমন প্রশ্নে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমি এখনও একা একাই চলাফেরা করি। সেভাবে আমি কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি বোধ করি না। তবে রাষ্ট্র সামাজিকভাবে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক এটা চাই। এক্ষেত্রে আমি বা অন্য কাউকে আলাদা করে রাষ্ট্র পৃথক গুরুত্ব দিক এটা কখনই চাই না।

সম্প্রতিক সময়ে নেপালে সরকার পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং নেপালের অভ্যুত্থান দুটোই অপশাসনের বিরুদ্ধে। এটা আমাদের সবার জন্য একটা বার্তা। আপনি যখন জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন জন প্রতিরোধের মধ্যে আপনাকে পড়তে হবে। ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলংকাতেও এটা হয়েছে।

Scroll to Top