রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনাময় খাত হলেও কুড়িগ্রামের রেলপথে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি শত বছরেও। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত তিস্তা-রমনা রেলপথ এখন খুঁড়িয়ে চলছে। বরাদ্দের অভাবে আধুনিকায়নের নামে নেওয়া প্রকল্পেও নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চিলমারী-কুড়িগ্রাম রেলপথ পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নের জন্য ২০২৩ সালে দুটি পৃথক প্যাকেজে প্রকল্প নেওয়া হয়। কুড়িগ্রাম-উলিপুর অংশের জন্য ২৯ কোটি টাকা এবং রমনা-উলিপুর অংশের জন্য ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট, রেললাইন ও স্লিপার বসানো, প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ এবং ১২টি সেতু-কালভার্ট সংস্কারের কথা থাকলেও কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। কুড়িগ্রাম থেকে উলিপুর অংশে ৮০ শতাংশ, উলিপুর থেকে চিলমারী অংশে অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৯২৮ সালের ২ আগস্ট তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার রেলপথ চালু হয়। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার ভেতরে রয়েছে ৪৩ কিলোমিটার রেললাইন। যাত্রীদের সুবিধার্থে ৮টি স্টেশন স্থাপন করা হয়।
এক সময় পার্বতীপুর-রমনা ও লালমনিরহাট-রমনা রুটে প্রতিদিন চারটি ট্রেন চলাচল করলেও ২০০২ সালে হঠাৎ তিনটি ট্রেন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে কুড়িগ্রাম রেলপথ ‘বি’ ক্লাস থেকে অবনমন হয়ে পড়ে ‘ডি’ ক্লাসে। বর্তমানে মাত্র একটি লোকাল ট্রেন রমনা থেকে তিস্তা পর্যন্ত চলাচল করে। তাও নির্ধারিত সময়ের তুলনায় অনেক দেরিতে। বেহাল রেললাইনের কারণে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার, যেখানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলে ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার গতিতে।
আবুল কালাম নামে এক ট্রেনযাত্রী বলেন, ‘একসময় রমনা স্টেশনে প্রতিদিন চারটি ট্রেন চলত এবং হকার, কুলির হাঁক-ডাকে ছিল ব্যস্ততম। এখন একটি ট্রেন চলে, সেটিও সময়মতো আসে না। তবুও ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করি। কারণ ট্রেনই সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ।’
কলামিস্ট ও সংগঠক নাহিদ হাসান বলেন, ‘নদীভাঙন ও দারিদ্র্যপীড়িত কুড়িগ্রামের মানুষ স্বল্প খরচে কুড়িগ্রাম-ঢাকা যাতায়াতে ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু রেললাইন এতটাই খারাপ যে, যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আধুনিকায়নে প্রকল্প নেওয়া হলেও অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ম্যানেজার রুবেল ইসলাম বলেন, ‘রেলওয়ের কাছ থেকে বিল এখনও বকেয়া। তাই বাকি কাজ শুরু করতে একটু সময় লাগছে, তবে এ সপ্তাহে বিল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিল পেলে দ্রুত কাজ হবে।’
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী শিপন আলী বলেন, ‘রেলওয়ের আর্থিক সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সময়মতো বিল দেওয়া যায়নি। শিগগিরই তারা বিল পেয়ে যাবে। আগামী জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, তার আগেই কাজ শেষ হবে।’