

একহারা গড়ন হলেও উইংয়ে বেশ শক্তপোক্ত উসমান দেম্বেলে। সহজে কেউ টলাতে পারে না। তবে সেটা বাইরের অংশ। মনে মনে দেম্বেলে বেশ নরম। আবেগে টলে যান।
সাফল্যের সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে শেষ ধাপে দেম্বেলের সামনে ছিল বিজয়মঞ্চের সিঁড়ি। সেখান থেকে কিংবদন্তিদের ডাক পাওয়ার আগেই অতিথিদের মাঝে রব উঠেছিল, ‘উসমান! উসমান! উসমান!’ সেই ভিড়ে অন্তত একজন যে চুপচাপ ছিলেন তা নিশ্চিত। লামিনে ইয়ামাল!
দেম্বেলের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। মঞ্চ থেকে কিছুক্ষণ আগেই ঘোষণা করা হয়েছে লড়াইটা ৩০ জন থেকে নেমে এসেছে তাঁদের দুজনে মাঝে।
ফয়সালা ঘোষণায় মঞ্চে ডাক পড়েছে পিএসজিতেই খেলা এক কিংবদন্তির, যার বাড়িতেও আছে এই অনুষ্ঠানের মধ্যমণি–ব্যালন ডি’অর ট্রফি! ভদ্রলোকের নাম রোনালদিনিও। মঞ্চে দাঁড়িয়ে খাম খুলে তিনি বিজয়ীর নাম ঘোষণা করার আগেই দর্শকসারির একাংশ তাদের রায় জানিয়ে দেন। উসমান!

অতিথিদের আসন থেকে দেম্বেলে যখন সিঁড়ি ভেঙে মঞ্চে উঠলেন, ইয়ামালের হাতে করতালি। বেশ কিছুক্ষণ আগে মঞ্চে তাঁরও ডাক পড়েছিল। ২১ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে বর্ষসেরা হিসেবে কোপা ট্রফি নিয়ে ফেরার সময় সঞ্চালক রুদ খুলিত তাঁকে বলেন, ‘সম্ভবত আমাদের আবার দেখা হচ্ছে।’
লিগ, কোপা দেল রে ও সুপার কোপা জিতেও এই ‘দ্বিতীয় সাক্ষাৎ’ যে সম্ভব হচ্ছে না, সেটা ততক্ষণে বোঝা হয়ে গেছে ইয়ামালের।
উসমান দেম্বেলে
দেম্বেলে মাকে পাশে রেখে বুঝে নিয়েছেন ব্যালন ডি’অর ট্রফিটা। মঞ্চে উঠে সবার আগে অতিথিদের মাঝে বসা মাকে বলেছেন, ‘আমরা একসঙ্গে এটা করেছি।’ আবেগের দমকে দেম্বেলে এরপর টলে যান। কেঁদে ফেলেন। সঞ্চালক কেট স্কট মঞ্চে তাঁর মাকে ডেকে আনার পর ধাতস্থ হলেন একটু। নিজেকে গুছিয়ে দেম্বেলে বললেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা অর্জন। পিএসজিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই ২০২৩ সালে আমাকে সই করানোর জন্য। সতীর্থরা গত বছরের মতো এ বছরও অসাধারণ। এটা ব্যক্তিগত ট্রফি নয়, আমাদের সবার অর্জন।’
বার্সেলোনায় ছয় বছর ছিলেন। খেলার চেয়ে দেম্বেলের চোটই তখন বেশি শিরোনাম হয়েছে। পিএসজি তাঁকে পেয়েছিল বার্সেলোনায় হতাশায় ডুবতে বসা এক প্রতিভা হিসেবে। কোচ লুইস এনরিকের ছোঁয়ায় সেই দেম্বেলেই এখন ব্যালন ডি’অর ট্রফির দ্যূতি ছড়িয়ে ধন্যবাদ জানালেন বার্সাকে, ‘যত ক্লাবে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ: রেঁনে, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড এবং সব সময় যে ক্লাবে খেলার স্বপ্ন দেখেছি, বার্সেলোনা। সেখানে অনেক কিছু শিখেছি। মেসি ও ইনিয়েস্তার মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলেছি। খুব ভালো লাগছে।’

রেমন্ড কোপা, মিশেল প্লাতিনি, জ্যাঁ পিয়েরে পাঁপিন, জিনেদিন জিদান ও করিম বেনজেমার পর ষষ্ঠ ফরাসি হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতলেন দেম্বেলে। তাঁর পিএসজি সতীর্থদের দেখার ভাগ্য হয়নি। ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানের রাতে মার্শেইয়ের মাঠে লিগের ম্যাচ ছিল লুইস এনরিকের দলের। ১-০ গোলে হারলেও কারও সম্ভবত অতটা খারাপ লাগার কথা না। শুধু দেম্বেলে নন, পিএসজি কোচ এনরিকেও তো জিতেছেন ইয়োহান ক্রুইফ ট্রফি। বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার। ম্যাচ থাকায় ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে পিএসজি কোচ তাঁর আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। তবে আরও একটি পুরস্কারে উচ্চারিত হয়েছে এনরিকের নাম।
সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড। মানবিক কাজে সংশ্লিষ্ট থাকার পুরস্কার। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের পাশে থেকে এবার তা জিতেছে জানা ফাউন্ডেশন। জানা এনরিকের মেয়ে। নয় বছর বয়সে মারা যায়।
দেম্বেলে ইনিয়েস্তাকে স্মরণ করার কিছুক্ষণ আগে মঞ্চে উঠেছিলেন স্প্যানিশ কিংবদন্তি। মেয়েদের ব্যালন ডি’অরজয়ীর হাতে ট্রফি তুলে দিতে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। ইনিয়েস্তারই প্রাণের ক্লাব বার্সেলোনার মিডফিল্ডার আইতানা বোনমাতির হাতে টানা তৃতীয়বারের মতো উঠল এই ট্রফি। হ্যাট্রটিক আর কি! মেয়েদের ফুটবলে আর কেউ বোনমাতির মতো তিনবার ব্যালন ডি’অর জেতেনি। টানা তিনবারের প্রশ্ন তো ওঠেই না। তেমনি ব্যালন ডি’অরে বার্সার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েও না। ছেলেদের ও মেয়েদের বিভাগ মিলিয়ে ১৭ বার এই ট্রফি উঠেছে বার্সার খেলোয়াড়দের হাতে। লিওনেল মেসি একাই জিতেছেন ৬ বার, বোনমাতি ৩ বার।

এনরিকে ভিডিওবার্তা দেওয়ার আগে মঞ্চে উঠে ফাবিও কাপেলোর কাছ থেকে নারীদের বিভাগে বর্ষসেরা কোচের ট্রফি বুঝে নেন ইংল্যান্ডের কোচ সারিনা ভিগমান। এনরিকের ট্রফিটি নিয়ে মঞ্চ থেকে অতিথিদের আসনে ফেরেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে শ্রদ্ধেয় এ কোচ।
আলো ঝলমলে অনুষ্ঠানের ফাঁকে গত জুলাইয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত লিভারপুল ও পর্তুগালের ফুটবলার দিয়োগো ও জোতা ও তাঁর ভাই আন্দ্রে সিলভাকে স্মরণ করা হয়। ফুটবল বিশ্বের পক্ষ থেকে তাঁদের পরিবারকে ‘সরি’ বলেন ব্রিটিশ সঞ্চালক কেট স্কট।
এক নজরে ব্যালন ডি’অর ২০২৫:
ব্যালন ডি’অর (পুরুষ): উসমান দেম্বেলে (পিএসজি, ফ্রান্স)
ব্যালন ডি’অর (নারী): আইতানা বোনমাতি (বার্সেলোনা, স্পেন)
ইয়াসিন ট্রফি (পুরুষ): জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা (ম্যানচেস্টার সিটি, ইতালি)
ইয়াসিন ট্রফি (নারী): হান্না হাম্পটন (চেলসি, ইংল্যান্ড)
ইয়োহান ক্রুইফ ট্রফি (পুরুষ): লুইস এনরিকে (পিএসজি)
ইয়োহান ক্রুইফ ট্রফি (নারী): সারিনা ভিগমান (ইংল্যান্ড)
কোপা ট্রফি (পুরুষ): লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা)
কোপা ট্রফি (নারী): ভিকি লোপেজ (বার্সেলোনা, স্পেন)
বর্ষসেরা ক্লাব (পুরুষ): পিএসজি
বর্ষসেরা ক্লাব (নারী): আর্সেনাল
জার্ড মুলার ট্রফি (পুরুষ): ভিক্টর ইয়োরকেরেস (আর্সেনাল, সুইডেন)
জার্ড মুলার ট্রফি (নারী): এয়া পাজোর (বার্সেলোনা, পোল্যান্ড)
সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড: জানা ফাউন্ডেশশন।
শেয়ার করুন:
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to share on Telegram (Opens in new window) Telegram
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on Threads (Opens in new window) Threads