অর্ধশতাব্দী পর চন্দ্রাভিযানে মানুষের পদচারণার আয়োজন করছে নাসা।

ছবি: সংগৃহীত

অর্ধশতাব্দী হয়ে গেছে কোনো দেশ মানুষ নিয়ে চাঁদের উদ্দেশে অভিযান চালায়নি। এবার নাসা চার মহাকাশচারীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করবে এবং ফিরিয়ে আনবে, যাতে বিভিন্ন সিস্টেম পরীক্ষা করা যায়।

নাসা জানিয়েছে, তারা ফেব্রুয়ারিতেই চারজন মহাকাশচারীকে নিয়ে দশ দিনের এক অভিযানে চাঁদের চারপাশে পাঠানোর আশা করছে।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থাটি আগে ঘোষণা করেছিল, এই অভিযান এপ্রিলের শেষ নাগাদ যেকোনো সময় শুরু হতে পারে। তবে এবার তারা ফেব্রুয়ারিতেই মিশনটি এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

বিবিসির প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, আর্টেমিস-২ মিশন হলো আর্টেমিস কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপ, যার লক্ষ্য হলো মহাকাশচারীদের চাঁদের মাটিতে অবতরণ করানো এবং দীর্ঘমেয়াদে সেখানে অবস্থান নিশ্চিত করা।

নাসার অ্যাক্টিং ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর লাকিশা হকিন্স বলেন, ‘এটি হবে মহাকাশ অন্বেষণের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’

তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সবাই ইতিহাসের প্রথম সারির দর্শক হতে যাচ্ছি। লঞ্চ উইন্ডো ৫ ফেব্রুয়ারির মতো দ্রুত সময়েও খুলে যেতে পারে। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হলো নিরাপত্তা।’

আর্টেমিস লঞ্চ ডিরেক্টর চার্লি ব্ল্যাকওয়েল-থম্পসন জানান, মহাকাশচারীদের চাঁদে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি শক্তিশালী রকেট সিস্টেম, স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) প্রায় পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন শুধু ক্রু ক্যাপসুল ওরায়ন-কে যুক্ত করা এবং গ্রাউন্ড টেস্ট সম্পন্ন করাই বাকি।

প্রথম আর্টেমিস মিশন ২৫ দিনের ছিল, যা ২০২২ সালের নভেম্বরে মানুষবিহীন মহাকাশযান উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এতে মহাকাশযানটি চাঁদের চারপাশে ঘুরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করে।

ছবি: সংগৃহীত

সেই মিশন মোটের ওপর সফল হলেও, পৃথিবীতে ফেরার সময় তাপঢাল বা হিটশিল্ডে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। নাসা জানিয়েছে, এবার সেসব সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।

আর্টেমিস-২ মিশনে চার মহাকাশচারী চাঁদের চারপাশ ঘুরে দশ দিনের এক যাত্রায় পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। নাসার রেইড ওয়াইজম্যান, ভিক্টর গ্লোভার ও ক্রিস্টিনা কক এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির জেরেমি হ্যানসেন এই দলে থাকবেন। তারা চাঁদে নামবেন না, তবে ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ এর পর প্রথমবার কোনো ক্রু পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথ ছাড়িয়ে এত দূরে যাবে।

আর্টেমিস-২ এর প্রধান ফ্লাইট ডিরেক্টর জেফ রাডিগান জানিয়েছেন, এই ক্রুরা মহাকাশে যাবেন আগের যেকোনো মানুষের চেয়ে আরও দূরে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা চাঁদেরও ৫ হাজার নটিক্যাল মাইল (৯,২০০ কিমি) দূরে পর্যন্ত যাবেন, যা আগের কোনো মিশনের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’

এই মিশনের মূল লক্ষ্য হলো রকেট ও মহাকাশযানের বিভিন্ন সিস্টেম পরীক্ষা করা, যাতে ভবিষ্যতে চাঁদে অবতরণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।

মহাকাশচারীরা ওরায়ন ক্যাপসুলে ভ্রমণ করবেন, যা হবে তাদের যাত্রার পুরো সময়ের আবাসস্থল। এই ক্যাপসুলটি বসানো থাকবে শক্তিশালী স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) রকেটের ওপর।

উৎক্ষেপণের পর দুটি শক্তিশালী সলিড রকেট বুস্টারের সাহায্যে মহাকাশযানটিকে প্রথমে পৃথিবীর কক্ষপথে নেওয়া হবে। লঞ্চের দুই মিনিট পরই বুস্টারগুলো তাদের কাজ শেষ করে পৃথিবীতে ফিরে আসবে।

উৎক্ষেপণের আট মিনিট পর বিশাল কোর স্টেজ আলাদা হয়ে যাবে দ্বিতীয় ধাপ থেকে, যেটিকে বলা হয় ইন্টারিম ক্রায়োজেনিক প্রপালশন সিস্টেম (আইসিপিএস) এবং এর সঙ্গে থাকবে ওরায়ন ক্রু ক্যাপসুল। এরপর ওরায়নের সোলার অ্যারে খুলে যাবে এবং সূর্যালোক না থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য মহাকাশযানের ব্যাটারি চার্জ করতে শুরু করবে।

নব্বই মিনিট পর আইসিপিএস ইঞ্জিন চালু করে যানটিকে আরও উঁচু পৃথিবীর কক্ষপথে নিয়ে যাবে, আর পরবর্তী ২৫ ঘণ্টা ধরে চলবে সব সিস্টেমের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা।

সব কিছু ঠিক থাকলে, ওরায়ন আইসিপিএস থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং দুই মহাকাশযানের মধ্যে এক ধরনের “স্পেস ব্যালে” সম্পন্ন হবে, যাকে আরও প্রযুক্তিগত ভাষায় বলা হয় প্রক্সিমিটি অপারেশনস ডেমোনস্ট্রেশন।

এসময় মহাকাশচারীরা হাতে নিয়ন্ত্রণ করা ওরায়নের ম্যানুভারিং থ্রাস্টার ব্যবহার করে আইসিপিএস-এর কাছে গিয়ে আবার দূরে সরে আসার অনুশীলন করবেন। এই মহড়া করা হচ্ছে ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযানে ল্যান্ডিং যানবাহনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া পরীক্ষার জন্য।

তার ২৩ ঘণ্টা পর, ওরায়নের সার্ভিস মডিউল চালু করবে একটি ট্রান্সলুনার ইনজেকশন (টিএলআই) বার্ন-যেটি হলো চাঁদের দিকে ধাবিত করার জন্য এক শক্তিশালী ধাক্কা। এরপর শুরু হবে চার দিনের যাত্রা, যেখানে মহাকাশচারীরা পৃথিবী থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার মাইল দূরে চলে যাবেন। যাত্রাপথে মহাকাশচারীরা সিস্টেম পরীক্ষা অব্যাহত রাখবেন।

Leave a Reply

Scroll to Top