[caption id="attachment_5726" align="alignnone" width="600"]
—সংগৃহীত ছবি[/caption]
ঝ্যাং শিজিয়ের বয়স মাত্র ১৮ বছর। এ বয়সেই তিনি এমন এক কাণ্ড করে বসেছেন, যা চীনজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে। সদ্য কৈশোর পেরোনো এই চীনা তরুণ অনলাইনে ভিডিও দেখে দেখে বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত একটি রকেট, তা–ও সস্তা উপকরণ ব্যবহার করে।
চীনের হান প্রদেশের একটি গ্রামে বাস করেন ঝ্যাং। ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রথম রকেট তৈরির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বাবার সঙ্গে বসে টেলিভিশনে সরাসরি একটি রকেট উৎক্ষেপণ দেখে তাঁর মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহ তৈরি হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহ আরও তীব্র হয়।
রকেট নির্মাণের বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতেন না তরুণ ঝ্যাং। এ বিষয়ে জানতে তিনি অনলাইনের আশ্রয় নেন। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তিনি ডিআইওয়াই রকেট তৈরি নিয়ে অন্যদের পোস্ট করা ভিডিও দেখতে শুরু করেন।
ঝ্যাং তখন মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। তাঁর একজন শিক্ষক বলেন, গ্রামের স্কুলের সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে একটি রকেট তৈরি করতে ইন্টারনেট ঝ্যাংকে দারুণভাবে সহায়তা করেছে।
নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ঝ্যাং তাঁর হাতের নাগালে থাকা সবকিছু ব্যবহার করেছেন বলেও জানান এই শিক্ষক। ঝ্যাং তাঁর বোনের কাছ থেকে একটি পুরোনো ল্যাপটপ নিয়ে সেটি ঠিকঠাক করে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন নিয়ে খোঁজখবর করেন।
শুরুর দিকে ঝ্যাং তাঁর পরিবারের শূকরের খামার থেকে নাইট্রেট সংগ্রহ করে সেগুলো রান্নাঘরে থাকা চিনি ও পানির সঙ্গে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে রকেটের জ্বালানি তৈরি করার চেষ্টা করেন।
একসময় তরুণ ঝ্যাং বুঝতে পারেন, তাঁর তৈরি জ্বালানি পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ হচ্ছে না। স্কুলে শেখা ফিলট্রেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি সার থেকে আরও বিশুদ্ধ জ্বালানি তৈরি করেন।
ঝ্যাং পিভিসি টিউব ও সিমেন্টের মতো সস্তা উপকরণ ব্যবহার করে রকেট ইঞ্জিন তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁর সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
ঝ্যাং থ্রি–ডি মডেলিং ও সফটওয়্যার ডিজাইন শিখে নেন। রকেটের যন্ত্রাংশ তৈরি করতে নববর্ষের উপহার হিসেবে পাওয়া অর্থ এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে একটি পুরোনো থ্রি–ডি প্রিন্টার কেনে নেন তিনি।
২০২৩ সালের জুন মাসে নিজের জন্মদিনে বাবা ও সহপাঠীদের নিজের প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ দেখতে আমন্ত্রণ জানান ঝ্যাং। সেদিন বৃষ্টির কারণে অবশ্য তাঁর উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হয়। পরদিন আবার চেষ্টা চালান, যাতে তিনি ঠিকই সফল হন।
এভাবে শতাধিকবার চেষ্টার পর অবশেষে নিজের তৈরি রকেট ৪০০ মিটার উচ্চতায় পাঠাতে পেরেছেন এই তরুণ। এ প্রচেষ্টায় তিনি চার ধরনের রকেট ইঞ্জিন তৈরি করেন, একাধিক একক ধাপের এবং একটি দুই ধাপের রকেট তৈরি করেন।
শখ একজন ব্যক্তির সেরা শিক্ষক।
ঝ্যাংয়ের শিক্ষক লং
ঝ্যাংয়ের এ প্রচেষ্টায় তাঁর স্কুল সব সময় সমর্থন দিয়েছে। তাঁকে সাড়ে তিন হাজার ইউয়ান (প্রায় ৫০০ ডলার) দিয়েছে। সহপাঠীরা তাঁকে গবেষণাকাজে সহায়তা করেছেন এবং গবেষণাকাজ চালাতে তাঁকে স্কুলে একটি জায়গা দেওয়া হয়েছে।
৩০ বছর ধরে ঝ্যাংয়ের স্কুলে শিক্ষকতা করা লং বলেন, তিনি এত বছরের পেশাজীবনে এই প্রথম কোনো শিক্ষার্থীর ভেতর বিজ্ঞানের প্রতি এত প্রগাঢ় ভালোবাসা দেখেছেন।
লং বলেন, ‘শখ একজন ব্যক্তির সেরা শিক্ষক।’
বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের প্রতি ঝ্যাংয়ের এই প্রবল আগ্রহে সব সময় পরিবারকে পাশে পেয়েছেন তিনি। তাঁর বাবা প্রাদেশিক রাজধানী চাংশাতে রাইডশেয়ার চালক। মা অন্য একটি শহরে ন্যানির কাজ করেন।
ঝ্যাংয়ের বাবা বলেন, ঝ্যাং যে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা, তা তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। কারণ, ঝ্যাং ভিডিও গেমসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পরিবর্তে খেলনা ভেঙে সেগুলোর যন্ত্রাংশ বের করে দেখতে বেশি আগ্রহী ছিলেন।
সম্প্রতি ঝ্যাং আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি শেনইয়াং অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিতে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। চীনের প্রথম সারির মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি এটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার খবর জানিয়ে ঝ্যাং আরও বলেছেন, তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য একদিন একটি সত্যিকারের রকেটের নকশা করা।