
মন্দিরে মণ্ডপে বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর। নবমীর দিনের সব আচার শেষে আজ দশমীতে কৈলাশে (স্বামীর বাড়ি) ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। আর বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা। গতকাল বুধবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ বেশ কিছু মন্দির ও মণ্ডপে সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে সনাতনী ভক্ত-শুভার্থীদের ভিড়। ঢাকঢোলের শব্দে চারদিক মুখর।
মহানবমী উপলক্ষে গতকাল সকালে দুর্গার মহাস্নান ও তর্পণ সম্পন্ন হয়। ষোড়শ উপচারে পূজা করা হয়। দেবী দুর্গার ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা সম্পন্ন হয়। পূজা শেষে যথারীতি অনুষ্ঠিত হয় অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ।
মূলত নবমীই পূজার শেষ দিন। নবমী নিশীথেই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। তাই এ দিনটি শুধু আধ্যাত্মিকতার জন্য নয়, বিদায়ের আবেগও ভর করে ভক্তদের মনে। সনাতন বিশ্বাস মতে, নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির আবির্ভাব ঘটান দেবী দুর্গা।
নবমী তিথির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো সন্ধিপূজা, যা অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট মিলে মোট ৪৮ মিনিটব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এ সময়েই দেবীর হাতে বধ হয় মহিষাসুর আর ভগবান রামচন্দ্র জয় করেন রাবণকে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘দুর্গা মায়ের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। কৈলাশে ফিরে যাবেন মা দুর্গা। আবার আমাদের অপেক্ষা শুরু হবে আগামী বছরের পূজার জন্য। এবারের পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদে পূজা উদযাপন করতে পেরেছেন। এজন্য আমরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
উপকূলীয় ২০৭ পূজামণ্ডপে কোস্ট গার্ডের বাড়তি নজরদারি : শারদীয় দুর্গাপূজায় উপকূলী ও নদী তীরবর্তী এলাকার ২০৭টি মন্দির ও পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করছে কোস্ট গার্ড। এরমধ্যে রয়েছে ঢাকা জোন ২৫টি, পূর্ব জোন (চট্টগ্রাম) ৫৬টি, পশ্চিম জোন (মোংলা) ৪৪টি ও দক্ষিণ জোন (ভোলা) ৮২টি মন্দির ও পূজামণ্ডপ। বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার শ্রী রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গাপূজার নিরাপত্তা পরিদর্শনে গিয়ে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কোস্ট গার্ডের তৎপরতায় উপকূল ও নদী তীরবর্তী এলাকার ২০৭টি পূজামণ্ডপে উৎসবমুখর পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হচ্ছে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক আরও বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জনের স্থানগুলোতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমাদের বিশেষ ডুবুরি দল সর্বদা প্রস্তুত আছে। এছাড়া নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত রয়েছে।’