
মিশরের সাবেক পর্যটন ও প্রত্নসম্পদমন্ত্রী ড. খালেদ এল-আনানি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)-এর মহাপরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। প্যারিসে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির নির্বাহী পরিষদের ২২২তম অধিবেশনে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে তিনি ইতিহাস গড়েছেন রেকর্ড ব্যবধানে জয়লাভ করে।
এল-আনানি পেয়েছেন ৫৫টি ভোট, যেখানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ফিরমিন এদোয়ার মাতোকো পেয়েছেন মাত্র দুটি ভোট— যা ইউনেস্কোর ইতিহাসে সর্বাধিক ব্যবধানের বিজয়। এর মাধ্যমে তিনি কেবল প্রথম মিশরীয়ই নন, বরং প্রথম আরব নাগরিক হিসেবেও সংস্থাটির সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত হয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন।
ভোট ফল ঘোষণার পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এল-আনানি বলেন, গত ৩০ মাসে আমি ৬৫টি দেশ সফর করেছি। আমার প্রচারণা ছিল সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক— যেখানে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কোনো প্রকার বৈষম্য বা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ছাড়াই ইউনেস্কোকে আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।
১৯৭১ সালে গিজায় জন্মগ্রহণ করা খালেদ এল-আনানি একজন খ্যাতনামা ইজিপ্টোলজিস্ট, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের অন্যতম অগ্রপথিক। তিনি ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মিশরের পর্যটন ও প্রত্নসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি কায়রোর মিশরীয় জাদুঘরের পরিচালক এবং হেলওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজিপ্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক
ছিলেন।হেলওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ১৯৯৬ সালে ইজিপ্টোলজিতে স্নাতকোত্তর এবং ২০০১ সালে ফ্রান্সের পল ভ্যালেরি মন্টপেলিয়ে থ্রি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
আরবি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী এল-আনানি মিশরের বহু ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম (GEM) নির্মাণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়, যা শিগগিরই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
২০২৩ সালে মিশরের পক্ষ থেকে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক পদে মনোনয়ন পান এল-আনানি। স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তি ও সংলাপের অঙ্গীকারকে কেন্দ্র করে পরিচালিত তাঁর প্রচারণা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তিনি ঘোষণাদেন, তাঁর লক্ষ্য হবে “মানুষের জন্য একটি ইউনেস্কো” গড়ে তোলা— যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা আরও মানবিক ও কার্যকর হবে।
সম্প্রতি ফ্রান্স সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘শেভালিয়ে দ্য লেজিয়ন দ’অনার’-এ ভূষিত করেছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত এরিক শেভালিয়ে তাঁকে অভিহিত করেছেন “শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপে এক অনন্য প্রেরণার প্রতীক” হিসেবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ড. খালেদ এল-আনানি এ বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের অতিথিপরায়ণ জনগণের উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেন এবং ঐতিহাসিক পানাম নগর পরিদর্শন করেন— যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। এই অভিজ্ঞতা তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলে এবং মিশর ও বাংলাদেশের মধ্যকার দীর্ঘ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের সৌন্দর্যকে আরও উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরে।