দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতেছেন তারকারা।

ছবি-সংগৃহীত

মহালয়া থেকে বিসর্জন– প্রতিটি মুহূর্ত রঙিন করে রাখতে চান তারকারা। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা ফিরে পেতে চান দুর্গাপূজার সেই আনন্দময় মুহূর্ত, যা স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল। আজ বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব। তারকাদের সেই পূজার গল্প নিয়ে এই আয়োজন…

অপু বিশ্বাস

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ঢাকাতেই আছি এবার। কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। দাদা-বউদির সঙ্গে বাসায় সময় কাটাব। এ বছর ঘরোয়াভাবেই পূজা উদযাপন করব। এ উৎসবে এখন কোথাও যেতে মন চায় না। পূজার দিনগুলোয় মা-বাবাকে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। তারা বেঁচে নেই। তাদের অভাব কোনোদিন পূরণ হবে না। প্রতিদিনই তাদের মিস করি। তবে পূজায় আরও বেশি কষ্ট লাগে।

বগুড়াতেই আমার বেড়ে ওঠা। ছোটবেলায় সেখানেই পূজার দিনগুলো কাটত আনন্দে। বাবা, কাকা, মা এবং আরও অনেক আত্মীয়স্বজন থাকতেন। পূজার এ সময়টায় সবাই একত্র হতেন। তখন আমাদের বাড়ি উৎসবে মুখর হয়ে উঠত। নতুন জামা পরে ভোরবেলা প্রতিমা দেখতে যাওয়া, মায়ের ভোগের খাবার, সবার সঙ্গে মিলে হৈ-হুল্লোড়– সবকিছু মিলে রঙিন হয়ে উঠত পূজা। বাসায় বসে পূজায় টুকটাক রান্নার চেষ্টা করি। নিরামিষ রান্না মায়ের ( শেফালি বিশ্বাস) কাছ থেকে শেখা। মায়ের সব রান্নাই আমার প্রিয়। তবে বেশি মনে পড়ে মায়ের হাতে মাখা চচ্চড়ি, পাঁচমিশালি সবজি আর আলুর দমের কথা। মা এ খাবারগুলো অন্য রকমভাবে রাঁধতেন। প্রতিটি রান্নার উপাদানের নিজস্ব একটা স্বাদ রয়েছে। পূজার খাবারের মধ্যে আমার প্রিয় মহাষ্টমীর ভোগের থালা। ভোগের থালা মানেই খিচুড়ি, লাবড়া আর নানা পদের ভাজা। ওই খাবার অমৃত বলে মনে হয়।

পূজা চেরী

পূজা মানেই আনন্দ। এবার এই উৎসব ঢাকায় কাটবে। আমার পূজার আনন্দ শুরু হয়ে গেছে অষ্টমী থেকে। ওই দিন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়েছিলাম। লাল-সাদা শাড়িতে, মণ্ডপের পরিবেশে সবার সঙ্গে আনন্দময় সময় কেটেছে। আমার আনন্দের সময়গুলো সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করি। মণ্ডপের ছবি সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। ভক্তদের নানা রকম প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। মণ্ডপে গিয়ে একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিল। কেউ সেলফি তুলতে এগিয়ে এসেছেন, আবার কেউ দূর থেকে শুধু তাকিয়ে ছিলেন। অনেকের চোখেমুখে একটা সংশয় ছিল, আমি আসলেই কি পূজা চেরী! তবে পুরো বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। আজ বিজয়া দশমীতে রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। পূজার সময় মাকে খুব মিস করছি। তিনি বেঁচে নেই। মা থাকলে পূজায় অন্য রকম আনন্দ হতো।

খুলনায় আমার গ্রামের বাড়ি হলেও বেড়ে উঠেছি হাজারীবাগে। ধুলোমাখা শৈশবের দিনগুলো ওই মাটিতেই কেটেছে। নানা রকম পোশাক পরে বের হতাম। নানা রকম উপহার পেতাম। উপহার পেয়ে মনটা আনন্দে ভরে যেত। ছোটবেলা তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজারসহ পুরান ঢাকার অনেক মন্দিরে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতাম। আত্মীয়স্বজন বাসায় আসতেন। পথে পথে হরেক রকম মুখরোচক খাবার খেতাম। বাসায় এসে মায়ের হাতের সুস্বাদু খাবার খেয়ে তৃপ্তি পেতাম। সেই সময়গুলো খুব মিস করি।

মন্দিরা চক্রবর্তী

ঢাকাতেই পূজার সময় কাটছে। পূজা সব সময় খুলনাতে গ্রামের বাড়িতে করা হয়। কিন্তু এবার কাজের চাপে যাওয়া হচ্ছে না। এবার পূজাকে কেন্দ্র করে সে রকম কোনো পরিকল্পনা নেই। পরিবারকে সময় দেব, বন্ধুদের সঙ্গে পূজার প্যান্ডেলে ঘুরব, আড্ডা দেব। শৈশবের পূজা আসলে অনেক সুন্দর ছিল। তখন মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটানো হতো। মা-বাবা যেখানে নিয়ে যেতেন, সেখানেই যেতাম। মা-বাবা পছন্দ করে জামা-জুতা কিনে দিতেন। সেটি পেয়ে ভীষণ খুশি হতাম। বড় হয়ে পূজার সময় মা-বাবাকেও সময় দিই, সঙ্গে বন্ধুবান্ধব যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া নিজের একটা জীবন আছে। সেটিও মেইনটেইন করতে হয়। আগে নিজে উপহার পেতাম। এখন নিজে সবাইকে পূজার উপহার দিই। আমাদের গ্রামের বাড়িতে প্রতিবছর আমি ভীষণ উৎসাহী থাকতাম, যখন দুর্গা প্রতিমা করা হতো। ওই সময় আমার মা প্রতিমাকে গয়না, শাড়ি পরাতেন। সে কাজে আমার মাকে সাহায্য করতাম। ওই ব্যাপারটা আমার খুব আনন্দ লাগত। অপেক্ষায় থাকতাম, কখন প্রতিমা সাজানো হবে। ওই মুহূর্তগুলো খুবই সুন্দর ছিল। এবার যেহেতু আমি গ্রামে যেতে পারছি না, তাই পূজার রঙিন সময়টা খুবই মিস করছি।

পূজা সেনগুপ্ত

পরিবারের সঙ্গেই পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করব। আমার দুটো পরিবার। একটি নিজের পরিবার-পরিজন, অন্যটি নাচের দলের সদস্যরা। প্রতিবছরই একটি দিন আমার নাচের স্কুল তুরঙ্গমীর সবাই মিলে আনন্দ করি। বাকি তিন দিন বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের জন্য থাকে। এবার পূজা দেখতে বনানী পূজামণ্ডপ, জগন্নাথ হল, খামারবাড়িসহ অনেক মন্দিরেই গিয়েছি। গতকাল বুধবার গিয়েছিলাম উত্তরায়। আজ দশমীর দিনে বনানী পূজামণ্ডপে আনন্দময় সময় কাটবে। বিসর্জনেও অংশ নেব। মাকে হারানোর পর পূজার আনন্দটা একটু ম্লান হয়ে গেছে। জীবন আসলে চলমান। আমাদের চারপাশে যারা আছেন, তাদের জন্য আমাদের ভালো থাকতে হয়। এবার পূজায় উপহার পেয়েছি, নিজেও দিয়েছি। ছোটবেলা থেকে ঢাকাতেই পূজা উদযাপন করছি। তবে গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে একবার পূজা উদযাপন করেছিলাম। শৈশবে পূজায় খুব আনন্দ হতো। এখন আনন্দটা অন্য রকম। পূজায় জগন্নাথ হলসংলগ্ন মেলা বেশ উপভোগ করি। আমার কাছে পূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো দুর্গা প্রতিমা। প্রতিমার শৈল্পিক দিক ও প্রতিমার ভেতরকার শক্তির ব্যাপারটি বেশি আকর্ষণ করে। পূজায় মসলিন, রাজশাহী সিল্ক, জামদানি ও সুতির শাড়ি পরতে পছন্দ করি।

মনোজ প্রামাণিক

পূজার সময় মানে আমার জন্য শুধু উৎসব নয়; বরং ছোটবেলার স্মৃতির এক জীবন্ত আলাপ। ছোটবেলায় মা আমাকে ঘরে বসিয়ে সুন্দর জামা-কাপড় পরাতেন। আর আমি অধীর হয়ে অপেক্ষা করতাম প্যান্ডেল থেকে ভেসে আসা ঢাকের প্রথম তালের শব্দ। সেই শব্দ আজও আমার কানে বাজে, যেন আমার প্রাণে একটি ছোট গুঞ্জন ছুঁয়ে যায়। ছোটবেলার গ্রাম, নদী, বাজার ও প্রতিবেশী সব মানুষের সঙ্গে পূজার সময় দেখা হওয়া– এ সবকিছু পূজার বিশেষ আকর্ষণ আমার কাছে। পাশাপাশি পূজার সময় মায়ের হাতের খাবার সবচেয়ে বেশি স্পেশাল। এ ছাড়া নাড়ু, মিষ্টি ও মুড়কি আমার খুবই পছন্দের।

অন্যদিকে পূজার অনেকটা সময় নিরামিষ খাওয়ার রীতি থাকলেও আমাদের বাসায় নদীর কিছু মাছ রান্না হয়, সেগুলো খুবই প্রিয়। যা এবার খুব মিস করছি। কারণ, বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলের বৃত্তি নিয়ে এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় আছি। কোর্স শেষ হতে আরও এক মাস লাগবে। তাই এবারের পূজায় দেশে থাকতে পারলাম না। আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ভক্ত-অনুসারী সবাইকে খুব মিস করছি।

গ্রামের বাড়িতে যেতে পারলাম না; সব মিলিয়ে একটু অন্য রকম পূজা কাটছে। বুসানে অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। এ ছাড়া অনেক বাংলাদেশি পড়াশোনা বা কাজের সূত্রে এখানে আছেন, তাদের সঙ্গেই আমার পূজার সময়গুলো কাটছে। দূরে থাকলে কী হবে, আমার মনটা কিন্তু পড়ে আছে গ্রামের প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে।

Leave a Reply

Scroll to Top