জুলাই আন্দোলনের নেপথ্যের ব্যক্তি শনাক্তের দাবি তারেক রহমানের।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সংগৃহীত ছবি

জুলাই আন্দোলনের ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে নিজেকে কখনোই দেখেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।তিনি বলেছেন, ‘এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কোনো দল বা ব্যক্তি নয়।এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।’

বিবিসি বাংলায় দেওয়া এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আজ সোমবার সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আপনার ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এটি মোটামুটি সব পক্ষই স্বীকার করে। সেই সময়ে আপনার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আবার আপনার দলের কিছু নেতা বা সমর্থক এই অভ্যুত্থানের ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে আপনাকে আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন?

জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘না, আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে নিজেকে কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই ৫ আগস্টের আন্দোলন, যা জুলাই আন্দোলন হিসেবে বিখ্যাত বা সকলের কাছে গৃহীত, এটি সফল হলেও এর প্রেক্ষাপট বহু বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা-চাই তা বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দল-বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে। আমি মনে করি, জুলাই-আগস্ট মাসে জনগণ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘শুধু কি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সেদিন মাঠে ছিলেন? অবশ্যই নয়। আমরা দেখেছি, সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররাও আন্দোলনের মাঠে ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গৃহিণীরাও রাস্তায় নেমে এসেছেন। আমরা দেখেছি, কৃষক, শ্রমিক, সিএনজি চালক, ছোট দোকান কর্মচারী, দোকান মালিক থেকে গার্মেন্টস কর্মী পর্যন্ত সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা দেখেছি, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মীরাও আন্দোলনে নেমে এসেছেন। এমন অনেক সাংবাদিক যারা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা সম্পৃক্ত হয়েছেন আন্দোলনে। কাজেই কারো ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই না। খাটো করে দেখতে চাই না।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সমাজের দল-মত নির্বিশেষে, শ্রেণি-বিন্যাস নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে। এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কোনো দল, কোনো ব্যক্তি নয়। এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।’

ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান সেটির পরে এটার কৃতিত্ব কার সেটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে, তাতে বিএনপির আসলে কোনো দায় আছে কিনা- জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘দেখুন ব্যাপারটা আমরা যদি একটু অন্যভাবে দেখি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন, মানুষের এই আত্মত্যাগ সাধারণত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শিশু হত্যা হয় না, শিশু শহীদ হয় না, শিশু মৃত্যুবরণ করে না। বাট আমরা দেখেছি এই আন্দোলনে স্বৈরাচারের এই আন্দোলনে যতটুকু আমার মনে আছে প্রায় ৬৩ জন শিশু শহীদ হয়েছে, মারা গেছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি যে, এই আন্দোলনের ক্রেডিট দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নয়।অনেকে হয়তো অনেক কিছু বলে থাকতে পারেন, ডিমান্ড করতে পারেন, সেটি তাদের অবস্থান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বা আমার দলের অবস্থান হচ্ছে- আন্দোলন হয়ে গেছে, আন্দোলনের জনগণ সফলতা লাভ করেছেন। আন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই দুটো পক্ষ আছে। একটি পক্ষ হচ্ছে মানুষ শহীদ হয়েছে। ২০০০ এর মত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনে। আবার আরেকটি পক্ষ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজারের মতন মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অন্ধ হয়ে গেছেন।’

‘আমার মনে হয়, আমাদের উচিত হবে, এখন আমাদের সকলের উচিত হবে রাষ্ট্রসহ সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর যার যতটুকু সম্ভব, সেই পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। যতটুকু সহযোগিতা তাদেরকে করা যায়, যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো’, যোগ করেন তারেক রহমান।

 

Leave a Reply

Scroll to Top