কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ দুই বিলিয়নেরও বেশি ডলার


বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংক থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত জুলাই থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত কিনেছে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার উৎস থেকে প্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজার থেকে কেনার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে এখন ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডলার কেনার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে ২৫ হাজার কোটির বেশি টাকা দিয়েছে। এতে দর স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়েছে। যদিও ডলার কিনে বাজারে টাকা সরবরাহ করায় মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ বেড়ে গত বৃহস্পতিবার ৩১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। আর বিপিএম৬ (আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল-৬) অনুযায়ী রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালের জুন থেকে আইএমএফের শর্ত মেনে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় রিজার্ভ নামে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, প্রতিটি ব্যাংকের ডলার ধারণের নির্ধারিত সীমা আছে।  সীমা পার হলে তাদের বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন প্রতি নিলামে ১৫ থেকে ২০টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে। এতে করে ডলারের দর স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি রিজার্ভ বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময়ে সবচেয়ে অস্বস্তি ছিল ডলার বাজার নিয়ে। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মূল কারণ বিবেচনা করা হয় ডলার না পাওয়া এবং ধারাবাহিকভাবে এর দর বৃদ্ধি। অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ পাচার প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করে বিদেশ থেকে ফেরত আনার বিষয়ে সরকারের তৎপরতা লক্ষ্যণীয়।  এতে করে হুন্ডি প্রবণতা ব্যাপক কমেছে। এর প্রভাবে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবাহ রয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি আয়েও মোটামুটি প্রবৃদ্ধি রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৮ শতাংশ। গত অর্থবছর রেমিট্যান্স বেড়েছিল ২৭ শতাংশ।  চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বেড়েছে  ১৬ শতাংশ। আবার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে শুধু গত জুন মাসে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে করে বিদেশি ঋণ বেড়ে ১১২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ২১৫ কোটি ডলার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যা ১৩ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের দর দ্রুত কমছিল। দীর্ঘদিন ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকা ডলার গত জুলাইয়ে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে। এভাবে ডলারের দর কমলে রেমিট্যান্স গ্রহীতা ও রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমন শঙ্কায় নিলাম ডেকে গত ৭ জুলাই প্রথম ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। ওই দিন গড়ে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় যা কেনা হয়েছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ১২১ টাকা ৮০ পয়সা দরে কেনা হয়েছে ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর বাজার থেকে ২০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। ওই সময় ডলার বেচাকেনা হচ্ছিল ৮৫ টাকার নিচে। সেখান থেকে রিজার্ভ কমে গত বছরের আগস্টে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। আর আমদানিকারকদের ডলার কিনতে হচ্ছিল ১২৩ থেকে ১২৬ টাকায়। যদিও তখন আনুষ্ঠানিক দর দেখানো হয় ১১৮ টাকা। এখন আনুষ্ঠানিক দরেই ডলার বেচাকেনা হচ্ছে।

Leave a Reply

Scroll to Top