একজনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন ছয় মনোনয়নপ্রত্যাশী

নরসিংদীর রায়পুরায় মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাদের একাংশ। শনিবার উপজেলার হাঁটুভাঙ্গা রেলক্রসিং-সংলগ্ন এলাকার একটি অডিটোরিয়ামে সত্যের পথে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসন থেকে মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট রূপ নিয়েছে। একাংশের নেতারা অভিযোগ করেছেন, দল কাউকে নিশ্চিত না করলেও ইঞ্জিনিয়ার মো. আশরাফ উদ্দিন বকুল নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছেন। এতে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছয় প্রার্থী গতকাল শনিবার একমঞ্চে মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়েছেন।

উপজেলার হাঁটুভাঙ্গা রেলক্রসিং-সংলগ্ন এক অডিটোরিয়ামে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ওই সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল, জেলা বিএনপির সহসভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এন জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেল ও স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাদল। তারা সবাই এই আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফাইজুর রহমানের সভাপতিত্বে সেখানে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক ভূঁইয়া মোহন, সহকোষাধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুছ ও সদস্য ইফতেখার আহমেদ ভূঁইয়াসহ অন্যরা। সঞ্চালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খোকন।
মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ সেখানে বলেন,
‘দল এখনও কারও মনোনয়ন নিশ্চিত করেনি। ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল মনোনয়নের কথা বলে দলকে দ্বিধাবিভক্ত করতে চাইছেন। আশা করি, কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলের মতামত প্রাধান্য দিয়ে মনোনয়ন দেবেন।’

রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেল অভিযোগ করেন, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তিনি ছাগলকাণ্ডের আলোচিত মতিউর-লাকীর পার্ককে রক্ষা করছেন। তাঁকে মনোনয়ন দিলে রায়পুরার জনগণ দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।
তৃণমূলের রায়ের মাধ্যমেই দলের মনোনয়ন ঠিক করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকের মঞ্চে উপস্থিত ত্যাগী নেতাদের মধ্য থেকে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তাঁর পক্ষেই কাজ করব।’
ইকবাল হোসেন শ্যামলের ভাষ্য, ‘আমি ২০০৬ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত। অনেক মামলা, হামলা ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আজকের জায়গায় এসেছি। আমাদের ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা থাকলেও দল ও দেশের স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, অনেকে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে দল ও নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করছেন।
সভায় উপস্থিত বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন, ছয় নেতাই শনিবার ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বকুলকে যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয়, সেই আহ্বানই কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি জানিয়েছেন।

শনিবার ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল বিএনপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক। পাশাপাশি ‘আমরা বিএনপি পরিবারে’র উপদেষ্টা। সভায় দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে রাতে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সভা করবে, এটা ভালো কথা। তবে সভায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার কারণ কি? আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশ মোতাবেক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছি।’
তাঁর ভাষ্য, রায়পুরায় সভা হবে, এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপি থেকে তাঁকে জানানো হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক মামলা-মোকদ্দমা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এসব মোকাবিলা করেই বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছি। তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে হয়তো বা আমাকে সভা সম্পর্কে জানাননি।’

Leave a Reply

Scroll to Top