আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্তে আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে


রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে তাজুল ইসলাম জানান, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়াসাপেক্ষে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এখন পর্যন্ত অনেকেই তাঁদের সাক্ষ্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন, সেসব কি এ মামলায় কাজে দেবে? এ প্রশ্নে তাজুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটাই কাজে লাগবে। কারণ আদালতে যখন সাক্ষীরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন, দলের ইনভলভমেন্টের ব্যাপারে বলেছেন, এগুলো জুডিশিয়াল ডকুমেন্ট হয়ে গেছে। সুতরাং ভবিষ্যতে যে তদন্ত হবে, যে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ আসবে তার মধ্যে বিদ্যমান যে সমস্ত সাক্ষ্য ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, সেই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো অন্যতম এভিডেন্স হিসেবে গণ্য হবে।

কোন কোন মানদণ্ড ধরে তদন্ত এগোবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তাজুল ইসলাম বলেন, আইনের মধ্যে যেভাবে আছে, সেভাবেই এগোবে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া আরও সামনে এগোলে হয়তো আরও বিস্তারিত আপনাদের জানানো হবে।

দল হিসেবে বিচারের ক্ষেত্রে সাজা কতটুকু? আইনে কী বলা আছে? এ প্রশ্নে তাজুল ইসলাম বলেন, দলকে কী ধরনের সাজা দেওয়া যাবে সেটা আইনে বলা আছে। প্রপার্টি সিজ করা, নেতাকর্মীর ব্যাপারে সার্টেইন কোনো ডাইরেক্টিভস ইস্যু করা, এগুলো আইনে আছে। তদন্তের রিপোর্ট এলে এবং সেই পর্যায়ে বিচার প্রবেশ করলে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ মুহূর্তে গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক হয়। সেখানে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল ছিল। তারাও কি বিচারের আওতায় আসবে? এমন প্রশ্নে তাজুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই তদন্ত শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তদন্ত যখন আরও এগোবে তখন যদি প্রয়োজন মনে হয় যে আরও কোনো দল ইনভল্ভড আছে এবং সেগুলোর ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার, তা হলে আমাদের তদন্ত সংস্থা সেই অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির নেতা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার তিন দিনের মাথায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় হতাহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হতে থাকে। আওয়ামী লীগের সময় যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছিল, সেই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার দলের নেতাকর্মী ও সমমনাদের বিরুদ্ধে এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। গত ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

একই দিনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের গেজেট জারি হয়েছে। আইনের দুটি ধারায় এই সংশোধনের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দল বা সংগঠন, তার অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিচারের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো সংগঠন যেমন রাজনৈতিক দল বা সহযোগী কোনো সত্তা যদি এ আইনের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধে জড়িত থাকে বলে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয়, তা হলে ওই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের থাকবে।

২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনাল আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছিল, সেখানে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের সুযোগও রাখা হয়। কিন্তু সংগঠনের সাজার বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল না। একাত্তরের ভূমিকার জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করতে সে সময় আইনটি আবার সংশোধন করবে বলেছিল শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু পরে তা আর করেনি।

 

Leave a Reply

Scroll to Top